• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১২:৫৭ অপরাহ্ন

চাঁদার টাকার দ্বন্দ্বে রাসেলকে হত্যা, দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঘাতকরা; পুলিশ

Reporter Name / ১২২ Time View
Update : বুধবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, (ঢাকা): ঢাকার পাশ্ববর্তী কেরানীগঞ্জ থানার তেলঘাট এলাকায় সাইফুল ইসলাম রাসেল নামের এক যুবককে রাতভর নির্যাতনের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রাব্বিসহ ১২জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা জেলা পুলিশ।পুলিশ বলছে, রাসেল হত্যায় জড়িত ঘাতকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলো। তারা দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- আফতাব উদ্দিন রাব্বি (২৪), আলমগীর ওরফে ঠান্ডু (৩৯), মো. আমির হোসেন (৩৮), মো. শিপন (৩১), দেলোয়ার দেলু (৩৭), মো. রনি (৩৫), অনিক হাসান হিরা (৩০), মো. সজীব (৩৬), ফিরোজ (৩১), রাজীব আহমেদ (৩৫), মো. মাহফুজুর রহমান (৩৬), মো. রতন শেখ (২৮)। মামলা দায়েরের পর রাজধানীর জুরাইন, কেরানীগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বুধবার ( ১৭ জানুয়ারি ) দুপুরে রাজধানীর পুরান ঢাকার জনসন রোডে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

এসপি আসাদুজ্জামান বলেন, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার তেলঘাটে রাব্বির ব্যক্তিগত অফিসে গত ১০ জানুয়ারি রাতে রাসেললে লোক মারফত ডাকা হয়। রাব্বির ডাকে রাসেল তার অফিসে হাজির গেলে রাব্বির নেতৃত্বে রাতভর রাসেলকে প্রচন্ড নির্যাতন করা হয়। কেচি দিয়ে রাসেলের মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে ১০ তারিখ দিনগত রাত ২ টার দিকে গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় রাসেলকে কয়েকজন মিলে বস্তায় ভরে রাসেলকে বাসায় নিয়ে যায়। সেখানেও রাসেলকে চিকিৎসকের কাছে নিতে বাঁধা দেয়। আহত অবস্থায় দীর্ঘসময় থাকার কারণে সেখানেই রাসেলের মৃত্যু হয়। পরের দিন রাসেলের স্ত্রী মিডফোর্ড হাসপাতালে নিতে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাসেলকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাসেল মারা যাওয়ার পর রাব্বির অফিসে নিহত রাসেলকে নির্যাতনের বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। আলোচিত এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত রাসেলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হাওলাদার বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় রাব্বিসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আগে থেকেই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। ঘটনার তথ্য পাওয়ার পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করে। হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী ছাড়াও তদন্তকারীরা ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ ও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া নির্যাতনের বিভিন্ন ভিডিও পর্যালোচনা করে ঘটনায় জড়িত আসামীদের সনাক্ত করে।

পরবর্তীতে তথ্য- প্রযুক্তির ঝিনাইদহ জেলার মহেষপুর থানার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বাঁশবাড়িয়া বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অত্র হত্যাকান্ডের মূল হোতা আফতাব উদ্দিন রাব্বি, সজীব (৩৬), রাজীব (৩৫), হীরা (৩০) ফিরোজ (৩১) কে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভোলা জেলার লালমোহন থানায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত আসামী, আলমগীর ঠান্ডু (৩৯), আমির (৩৮), রনি (৩৫), দেলোয়ার ওরফে দেলু (৩৭), শিপন (৩১), মাহফুজ (৩৬) ও মো. রতন শেখ (২৮) কে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অত্র হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

যে কারণে রাসেলকে হত্যা; গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে ঘটনা বিষয় জানিয়েছেন, নিহত রাসেল আসামী রাব্বির বন্ধু ছিলো। তেলঘাট এলাকায় রাসেল বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে থেকে রাব্বির নামে চাদাঁ তুলত। সেই টাকা রাব্বি ও তাদের অন্যান্য সহযোগীদের না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করে রাসেল। মূলত আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে রাব্বি ও তার সহযোগীরা রাসেলের উপর ক্ষুদ্ধ হয় এবং রাসেলকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় রাসেলকে মারার জন্য রাব্বি লোকজন দিয়ে রাসেলকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে আসে। তারপর অফিস রুমে রাব্বি ও তার সহযোগীরা মিলে সারারাত রাসেলকে নির্যাতন চালায়।

কেচি দিয়ে তার চুল কেটে দেয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে রাসেল তার বন্ধু রাব্বিকে ‘আব্বা আব্বা’ বলে ডাকে ও বাঁচার জন্য আকুতি মিনতি করতে থাকে কিন্তু তার পরেও সবাই মিলে তাকে পালাক্রমে মারতে থাকায় রাসেল গুরুতর আহত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। একপর্যায়ে রাব্বির লোকজন আহত রাসেলকে অচেতন অবস্থায় রাত ২টার দিকে রাসেলে স্ত্রীর কাছে দিয়ে আসে। পরদিন সকালে রাসেলকে মিডফোর্ড হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাসেল মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।

আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে রাব্বি তার রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে তেলঘাট এলাকায় নিরব চাঁদাবাজি করত। বিষয়টি আমাদের নজরে আসায় এ ধরনের চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ীদের বলবো আপনারা কেউ চাঁদা দিবেন না। কেউ চাঁদা দাবি করলে পুলিশকে জানাবেন আমরা ব্যবস্থা নেবো।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের রাব্বির অফিসে যাতায়াত ছিলো। কি ভাবে মানুষ পুলিশের উপর স্থা রাখবে এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, এমন কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে একজনকে থানা থেকে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হবে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post In Your Social Media


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category